আমিঃ হ্যালো কেমন আছো?
সুনয়নাঃ ভাল না।
আমিঃ আবার কি হলো?
সুনয়নাঃ মাছ কাটতে গিয়ে হাত কেটে গেছে।
আমিঃ তাহলে তো চিন্তার কথা।স্যাভলন অথবা ডেটল দিয়েছো?
সুনয়নাঃ না দেয়নি।
আমিঃ কেন দেওনি? এক্ষুনি হাত পরিস্কার করে এন্টিসেপ্টিক ক্রিম দিয়ে ব্যান্ডেজ করো।
সুনয়নাঃ জানেন বন্ধু, সারা বাজারের সব মাছ নিয়ে এসেছে ও। আমি একা বসে সকাল থেকে কাটছি তারপর রান্না করলাম।বাচ্চাটা আজ ভীষণ বিরক্ত করছে, বেড়াতে যাবে।
আমিঃ নিয়ে যাও কোন পার্কে।
সুনয়নাঃ ছেলের বাবা রেগে যাবে বাসায় এসে আমাদের না পেলে।
আমিঃ কেন রাগবে,কেন?
সুনয়নাঃ ও চায় আমরা ঘরেই থাকি। জানেন আজও ও আমার সাথে ঝগড়া করেছে। তাইতো আমাকে সায়েস্তা করতে এতো মাছ নিয়ে এসেছে।
আমিঃ কি করছো এখন তুমি?
সুনয়নাঃ চা বানাচ্ছি।
আমিঃ আমাকে এককাপ দেবে?
সুনয়নাঃ সত্যিই বলছি, আমার নিজে হাতে চা বানিয়ে আপনাকে খাওয়াতে ইচ্ছে করে। আপনার মতো মানুষকে রান্না করে খাওয়াতে কার না ভাল লাগবে বলুন?
আমিঃ তুমি কাটা হাত নিয়ে চা বানাছো! এটা ঠিক না। তোমার বর কোথায়?
সুনয়নাঃ শুয়ে আছে। চা নিয়ে গেলে তারপর উঠবে।
আমিঃ আচ্ছা তুমি তোমার বরকে চা খাওয়াও আমি পরে ম্যাসেঞ্জারে আসছি।
এই মেয়েটির সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয় হয়েছে।
ভীষণ আবেগী মেয়েটি।আমি প্রথম প্রথম মেয়েটিকে একটু আবেগ প্রবন মেয়ে বলেই ভেবেছিলাম কিন্তু কিছুদিন কথা বলার পর বুঝতে পারলাম মেয়েটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। মেয়েটি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড হওয়াতে যতটুকু দূরত্ব থাকা দরকার আমি সেটুকু মেনে চললেও, মেয়েটি অসম্ভব দ্রুত গতিতে আমার সাথে তার ব্যক্তিগত কথাগুলো শেয়ার করতে শুরু করলো। আমি অনেক চেষ্টা করেও ওকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারিনি।
মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল খুব অল্প বয়সেই।২৩ বছর বয়সে তার একটি ফুটফুটে বাচ্চা।তারমানে আমার সাথে ওর বয়সের পার্থক্য অনেক।
আমার দুই মেয়ে।বড় মেয়ে ডেন্টালে ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। ছোট মেয়ে এবার এইচ এস সি পরীক্ষা দেবে।
আমার স্ত্রী ঢাকার একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষিকা। মেয়েদের দেখাশোনা আর সংসারের সমস্ত কাজেই নিজের হাতে করে। বাবার বাড়ি কাছে হওয়াতে আমার বউ বেশ খুশিতেই আছে।
আমি চাকরির সুবাদে দিনাজপুর থাকি আর আমার পরিবার ঢাকায়।মেয়েদের লেখা পড়ার সুবিধার জন্য বাধ্য হয়ে পরিবারের কাছ থেকে এতো দূরে থাকতে হয়। মাঝে মাঝে চাকরী ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করে মেয়েদের কাছে।
উপজেলা শহরের একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক হিসেবে কাজ করছি। একলা থাকি সময় কাটে না, তাই ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে কথা বলি লাইক কমেন্ট করি।
জানি না কবে এই মেয়েটি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড হলো।
মেয়েটির কথাগুলো খুব ভাল লাগে,খুব মিষ্টি গলার স্বর। প্রথম প্রথম ম্যাসেঞ্জারের লিখে কথা হতো, তারপর মোবাইলেই বেশি কথা হতো। ওর মিষ্টি কন্ঠের কথা শুনতে আমার ভীষণ ভাল লাগতো।
ধীরে ধীরে আমি আসক্ত হয়ে পড়লাম ওর কথার যাদুতে।আগেই ম্যাসেঞ্জারে ছবি দেখেছি মেয়েটির, দারুণ সুন্দর মিষ্টি মেয়েটি।
সুনয়নার মিষ্টি কন্ঠে ওর কষ্টের কথা শুনতাম আর নিজেও ওর কষ্টের সাথে জড়িয়ে পরলাম। ওর সমস্যাগুলো মনে হতো আমার সমস্যা।
অনেকদিন এমন হয়েছে আমি ফোন দিচ্ছি কিন্তু ও ফোন ধরছে না।একদিন অথবা দুইদিন পর ওই আমাকে ফোন দিতো আর বলতো বন্ধু সরি,আমার বর এই দুইদিন বাসায় ছিল তাই আপনার ফোন ধরতে পারিনি।
সুনয়না বলতো, এই দুই দিন আমার দম বন্ধ হয়ে ছিল বন্ধু। ও বাসায় থাকলে আমাকে শান্তি দেয় না।আমাকে কথায় কথায় এটা ওটা ছুঁড়ে মারে। ও কি চায় আমি বুঝিনা বন্ধু। আমার মনে হয় ও আমার মৃত্যু চায়।
আমি বললাম, এটা তোমার ভুল ধারণ, স্বামী কখনো স্ত্রীর মৃত্যু কামনা করতে পারে?
সুনয়নাঃ না, আমার ভুল ধারণা না। আপনি ওকে চেনেন না বলে একথা বলছেন।
আমিঃ তুমি ওর কাছে জানতে চাও , কেন সে তোমাকে অসম্মান করে?
সুনয়নাঃ বলেছি। বলে, তোকে আমার সহ্য হয় না। তুই আমাকে ছেড়ে চলে যা।
আমার মনে হয় ওর অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে।
আমিঃ খোঁজ নিয়ে দেখতে পারো।
সুনয়না ফোনটা কেটে দিল। আমি আবার অপেক্ষা করে আছি কখন ও ফোন দেবে। ওর মোবাইলে টাকা থাকেনা বলে আমি প্রায়ই টাকা পাঠিয়ে দিতাম।
ওর স্বামী ওকে কখনো হাত খরচের টাকা দেয় না। বাচ্চার জন্যও টাকা দেয় না।
আমি প্রতি মাসে কিছু টাকা ওকে পাঠিয়ে দিয়েছি। প্রথম প্রথম ও বেশ রেগে গিয়েছিল। বলেছে, আপনি কেন আমাকে টাকা দেবেন? পরে আমার যুক্তির কাছে হেরে গেছে।
পরে বলেছে, জানেন বন্ধু এখন আমি বাচ্চার বাবা বাসায় না থাকলে ছেলেকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি।ঘুরে বেড়াই রিকসা করে তারপর রেস্টুরেন্টে খেয়ে বাসায় ফিরি।আমার ছেলে ভীষণ খুশি।বন্ধু, এটা সম্ভব হয়েছে কেবল মাত্র আপনার জন্য, আপনার দেওয়া টাকার জন্য।
সমুদ্রের বিশাল বড় বড় ঢেউগুলো আছরে পড়ছে সৈকতে। একটু দূরে দুই মেয়ে আর মেয়ের মা অপলক নয়নে সমুদ্রের বিশালতা দেখছে। আমি বরাবরই সমুদ্র পাগল মানুষ। সেই কলেজ জীবন থেকেই সমুদ্রের কাছে ছুটে আসতাম।
সমুদ্রের এই বিশালতা আমার নিজের মধ্যে ধারণ করবার ইচ্ছা অনেক দিনের কিন্তু সেটা আদৌও কি কিছুটা ধারণ করতে পেরেছি? নিজেই বুঝতে পারি তা আমি পারিনি।
কক্সবাজারের পরিবার নিয়ে আসবার পরও সুনয়নার সাথে কথা হয় তবে খুব কম।
ওর সমস্যাটা দিন দিন বাড়ছে। আমি প্রায় সময়ই ওর সমস্যা নিয়ে ভাবি। কেন যেন ওই মেয়েটির কথা এতো ভাবি আমি নিজেও বুঝতে পারি না।
সেদিন অনেক রাতে ম্যাসেজ এলো, বিদায় বন্ধু।
এরপর আর সুনয়নাকে আনলাইনে পাইনি।অস্থির হয়ে ফোন দিয়েছি ফোনও বন্ধ। কি করবো? কিছুই বুঝতে পারছিনা।অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটছে। প্রতিদিন ফোন করি কিন্তু ওর ফোন বন্ধ, আনলাইনেও আসছে না।
হয়তো বা সুনয়নার খোঁজ আমি আর পাব না কিন্তু ওর স্মৃতি আমার কাছে সারাজীবন থাকবে। আমার একলা জীবনে ও ছিল একমাত্র সঙ্গী।
লেখক- ফারজানা আহমেদ
প্রধান কার্যালয়: শিমুল লজ, ১২/চ/এ/২/৪ (২য় তলা), রোড নং ৪, শেরেবাংলা নগর,শ্যামলী,ঢাকা.
বার্তা বিভাগ-01763234375 অথবা 01673974507, ইমেইল- sangbadgallery7@gmail.com
আঞ্চলিক কার্যালয়: বঙ্গবন্ধু সড়ক, আধুনিক সদর হাসপাতাল সংলগ্ন, বাসস্ট্যান্ড, ঠাকুরগাঁও-৫১০০
2012-2016 কপি রাইট আইন অনুযায়ী সংবাদ-গ্যালারি.কম এর কোন সংবাদ ছবি ভিডিও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথায় প্রকাশ করা আইনত অপরাধ
Development by: webnewsdesign.com