থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ

সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ | ৮:৫১ অপরাহ্ণ |

থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ
যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে থ‍্যালাসেমিয়া রোগ হতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব

থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে, আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে মারাত্মক রক্ত স্বল্পতা দেখা যায়।

পিতা মাতা থেকে সন্তানের দেহে জিনের মাধ্যমে এ রোগের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় নিজের অজান্তেই পিতা মাতা এই রোগের জিন বহন করে। এদের থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার বলে। থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ারের কোন শারীরিক লক্ষণ না থাকায় তা খালি চোখে ধরা পড়ে না। কেবলমাত্র বাচ্চা জন্মদানের পরেই বাচ্চা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে পরে তা বোঝা যায়। একারণে বিয়ের পূর্বেই কিংবা বাচ্চা গ্রহণের পূর্বে থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার সনাক্তকরণ পরীক্ষা করিয়ে নেয়া জরুরি।


তবে, থ্যালাসেমিয়া কোন ছোঁয়াচে/সংক্রামক রোগ নয়, একজন থেকে অন্যজনে ছড়ায় না। কেবলমাত্র যে বংশে এ রোগ আছে সেই বংশের লোকজনই বংশানুক্রমে এটা বহন করে চলে।
থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত মানুষ সাধারণত রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ার ফলে অবসাদগ্রস্ততায় ভোগে, এমনকি এদের অঙ্গহানি ঘটতেও পারে।
শুধু তাই নয়, উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে যার পরিণতি হতে পারে অকাল মৃত্যু!
প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১ লক্ষ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। আমাদের সারাদেশে এরোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা সাড়ে তিন লাখেরও বেশি। আর, দেশে দেড় কোটিরও বেশি মানুষ নিজের অজান্তেই এ রোগের জিন বহন করছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৪ দশমিক ১ ভাগ মানুষ বিটা থ্যালাসেমিয়ার বাহক।
থ্যালাসেমিয়ার মহামারি হতে নিষ্কৃতি পাওয়ার উপায়ঃ থ্যালাসেমিয়ার মহামারি হতে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য প্রথম প্রয়োজন থ্যালাসেমিয়া বাহকদের শনাক্তকরণ।
আপনি হয়ত জানেনই না যে নিজের অজান্তেই বহন করে চলেছেন এই জিনটি, যেটা আপনার জন্য হয়ত ক্ষতিকর কিছু নয় কিন্তু আপনার একটু অসচেতনতাই আপনার ভবিষ্যতকে ঠেলে দিতে পারে চরম অনিশ্চয়তায়। জীবনকে করে তুলতে পারে দুর্বিসহ। কেননা, থ্যালসেমিয়ার ক্যারিয়ারই জন্ম দেয় থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশু, যা সারিয়ে তোলার জন্য কোন চিকিৎসা নেই।


নিজের পছন্দে কিংবা পারিবারিকভাবে – যেভাবেই হোক, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে বিয়ের আগে টেস্ট করে জেনে নিন আপনার এবং আপনার জীবনসঙ্গির থ্যালাসেমিয়া স্ট্যাটাস। যে কোন একজন ক্যারিয়ার হলে সমস্যা নেই, তবে দুজনে ক্যারিয়ার হলে সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বে দ্বিতীয়বার ভাবুন। কারণ, দুজন ক্যারিয়ার হলেই ভবিষ্যত প্রজন্ম থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করুন। মনে রাখবেন, পরিবারে একটি থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্ম হওয়া মানে সারাজীবনের জন্য তা ওই পরিবার তথা সমাজের জন্য বোঝা হয়ে যাওয়া।

সে সকল শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে-
১। পিতা এবং মাতা উভয়ই থ্যালাসেমিয়ার বাহক
২। পিতা এবং মাতা উভয়ই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত
৩। পিতা মাতার একজন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এবং অন্যজন বাহক


পিতা মাতা থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিংবা থ্যালাসেমিয়ার রোগী হলে শিশু জন্মদানের পুর্বেই শিশুর থ্যালাসেমিয়ার অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
শিশু থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত বা বাহক হয়ে জন্ম নিলে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়।
তবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে এই থ্যালাসেমিয়া থেকে পরিত্রাণের সর্বত্তোম পদ্ধতি হলো বিয়ের পূর্বেই পাত্র-পাত্রী উভয়েরই থ্যালাসেমিয়ার অবস্থা নির্ণয়ের পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।
থ্যালাসেমিয়া প্রধান দুই ধরনের হতে পারে:
আলফা থ্যালাসেমিয়া ও বেটা থ্যালাসেমিয়া।
সাধারণভাবে বেটা থ্যালাসেমিয়া আলফা থ্যালাসেমিয়া থেকে অধিক তীব্র।

আলফা থ্যালাসেমিয়া বিশিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ মৃদু বা মাঝারি প্রকৃতির হয়। অন্যদিকে বেটা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা বা প্রকোপ অনেক বেশি; এক-দুই বছরের শিশুর ক্ষেত্রে ঠিকমত চিকিৎসা না করলে এটি শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
সাধারণত শিশুর ১-১.৫ বছরের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো হল-
•রক্তে অতিরিক্ত আয়রন
• অস্বাভাবিক অস্থি
• প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া
• অবসাদ অনুভব
• দূর্বলতা
• শ্বাসকষ্ট
• মুখ-মন্ডল ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
• অস্বস্তি
• ত্বক হলদে হয়ে যাওয়া (জন্ডিস)
• মুখের হাড়ের বিকৃতি
• ধীরগতিতে শারীরিক বৃদ্ধি
• পেট বাইরের দিকে প্রসারিত হওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া
• গাঢ় রঙের প্রস্রাব
• হৃৎপিণ্ডে সমস্যা
সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হল, থ্যালাসেমিয়া নিয়ে একবার জন্মগ্রহণ করলে তা আর কখনই সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়।
কিন্তু, সময়মত নেয়া যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে ভয়াবহ এই ব্যাধিকেও প্রতিরোধ করা সম্ভব।
তাই প্রতিরোধ এখনি!

আপনার মুল্যবান মতামত দিন......

comments

প্রধান কার্যালয়: শিমুল লজ, ১২/চ/এ/২/৪ (২য় তলা), রোড নং ৪, শেরেবাংলা নগর,শ্যামলী,ঢাকা‌.
বার্তা বিভাগ-01763234375 অথবা 01673974507, ইমেইল- sangbadgallery7@gmail.com

আঞ্চলিক কার্যালয়: বঙ্গবন্ধু সড়ক, আধুনিক সদর হাসপাতাল সংলগ্ন, বাসস্ট্যান্ড, ঠাকুরগাঁও-৫১০০

2012-2016 কপি রাইট আইন অনুযায়ী সংবাদ-গ্যালারি.কম এর কোন সংবাদ ছবি ভিডিও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথায় প্রকাশ করা আইনত অপরাধ

Development by: webnewsdesign.com