বড় কোনো পুরস্কার পাওয়া ব্যক্তিদের পরিচিতির বিষয়ে ইন্টারনেটে কিছু না কিছু ঠাঁই-ঠিকানা থাকে, কিন্তু ২ অক্টোবরের আগে ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড নামের কোনো নারীকে নিয়ে এ ধরনের কোনো তথ্য ছিল না। তাঁর বিষয়ে একটি নিবন্ধ পোস্ট করা হলেও তা অযোগ্য বলে বাতিল করেন উইকিপিডিয়ায় সঞ্চালকেরা। যেই না তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন, অমনি রাতারাতি বদলে গেল তাঁর চারপাশের দৃশ্যপট।
গতকাল মঙ্গলবার উইকিপিডিয়া প্রদায়কেরা ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড নামের এক নারীর প্রথম উইকিপিডিয়ার পাতা খুলেছেন। কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের লেজারবিজ্ঞানী ওই নারী পদার্থবিদ্যায় নোবেল পাওয়ার পর তাঁর নামে উইকিপিডিয়ায় পাতা খোলা হয়। এ বছর যে তিন পদার্থবিজ্ঞানীকে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের একজন ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড। এর মধ্য দিয়ে ৫৫ বছর পর প্রথম কোনো নারী পদার্থবিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেলেন। ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড নামের ওই কানাডীয় বিজ্ঞানী এযাবৎ পদার্থবিদ্যায় নোবেল পাওয়া তৃতীয় নারী।
প্রথম নারী হিসেবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন মাদাম মেরি কুরি। ১৯০৩ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। এরপর মাঝখানে ৬০ বছরের বিরতির পর ১৯৬৩ সালে পদার্থে নোবেল পান মারিয়া গোয়েপার্ট মায়ের নামের আরেক নারী বিজ্ঞানী। আর এবার তৃতীয় নারী হিসেবে পদার্থে নোবেল পেলেন স্ট্রিকল্যান্ড।
লেজার নিয়ে গবেষণায় যুগান্তকারী উদ্ভাবনের জন্য গতকাল পদার্থে নোবেল পান মার্কিন বিজ্ঞানী আর্থার অ্যাশকিন, ফরাসি বিজ্ঞানী জেরার্ড মৌরৌ ও কানাডীয় বিজ্ঞানী ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস গতকাল তাঁদের নাম ঘোষণা করে। তাঁরা তিনজন মিলে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও সার্জারিতে লেজার ব্যবহারের নতুন উপায় আবিষ্কার করেছেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, তিন বিজ্ঞানী যৌথভাবে নোবেল পুরস্কারের অর্থ ৯০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ১০ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার) ভাগ করে নেবেন। অপটিক্যাল টুইজার্স হিসেবে একটি লেজার কৌশল উন্নত করেছেন অ্যাশকিন, যা জৈবিক পদ্ধতি গবেষণায় ব্যবহৃত হয়। মৌরৌ ও স্ট্রিকল্যান্ড উচ্চ তীব্রতা সৃষ্টি এবং খুব দ্রুত লেজার পালসের প্রক্রিয়া উন্নত করেছেন।
রয়টার্স বলছে, অস্ত্রোপচারের জন্য ব্যবহৃত লেজারের ক্ষেত্রে এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সাফল্য দেখানোয় নোবেল কমিটি তিনজনকে এই পুরস্কারে ভূষিত করেছে।
মৌরৌ ও স্ট্রিকল্যান্ড ১৯৮৫ সালে যৌথভাবে একটি গবেষণাপত্র লেখেন। মৌরৌর নামে ২০০৫ সাল থেকেই উইকিপিডিয়ার পেজ রয়েছে। কিন্তু স্ট্রিকল্যান্ডের নাম সেখানে ঠাঁই পায়নি।
এক টুইটার ব্যবহারকারী বলছেন, এ বছরের মে মাসে স্ট্রিকল্যান্ডের নামে অনলাইন এনসাইক্লোপিডিয়া খ্যাত উইকিতে একটি নিবন্ধের খসড়া জমা দেওয়া হলেও এর সম্পাদকেরা তা বাতিল করেন। ওই নিবন্ধে যে বিষয়বস্তুর রেফারেন্স দেওয়া হয়েছিল, তা উইকিপিডিয়ার সঙ্গে যায় না বলে বাতিল করা হয়।
কিন্তু উইকিপিডিয়ায় নাম না থাকলে কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটার গুরুত্ব হচ্ছে—নারীদের বিজ্ঞান চর্চায় অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। অনেকেই এ ক্ষেত্রে কাজ করতে উৎসাহী হন না বা এ ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হন না। তাই তাঁদের তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ।
নারীদের বিজ্ঞানচর্চায় এগিয়ে আসা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয় থেকে অনেকেই বুঝতে পারবেন। কেউ যখন কোনো বিজ্ঞানীর কথা ভাবেন, তাঁদের মনে নারী বিজ্ঞানীর নামও ভেসে আসা দরকার।
এ বছরের জানুয়ারি মাসে পিউ রিসার্চ সেন্টার একটি গবেষণা সমীক্ষা প্রকাশ করে, এতে দেখা যায় যে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত ক্ষেত্রে কাজ করা ৫০ শতাংশ নারী বৈষম্যের শিকার হন। ৩৬ শতাংশ যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। এ ছাড়া নারী-পুরুষের বেতনবৈষম্যের বিষয়টিও উঠে এসেছে।
সফল ও অনন্যসাধারণ গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য সেই ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দিয়ে আসা হচ্ছে। এটিকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার। এই পুরস্কারের পরিসংখ্যান বলছে, নোবেল লরিয়েট বা নোবেলজয়ী নারীর সংখ্যা এই পুরুষতান্ত্রিক বিশ্বে নেহাত নগণ্য, যা প্রতি ২০ জনে ১ জন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯০১ থেকে ১৯২০ সালে মাত্র ৪ জন নারী নোবেল পান। ১৯২১-৪০ এবং ১৯৪১-৬০ সালে যথাক্রমে ৫ ও ৩ জন নারী নোবেল পুরস্কার পান। এরপর ১৯৬১ থেকে ১৯৮০ সালে ৭ নারী এবং ১৯৮১ থেকে ২০০০ সালে ১১ জন নারী নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। আর ২০০১ থেকে ২০১৭ সালে মোট ১৯ নারী বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এই পুরস্কার পেয়েছেন। নোবেল পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দিলে দেখা যায়, ১৯০১ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত সময়ে যেখানে ৮৯৬ জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তার মধ্যে মাত্র ৪৮ জন নারী। তাঁদের মধ্যে মেরি কুরি দুবার নোবেল পান।
১৯৫৯ সালের ২৭ মে কানাডার অন্টারিওতে জন্মগ্রহণ করেন ডোনা থিও স্ট্রিকল্যান্ড। তাঁকে লেজারের ব্যবহারিক ক্ষেত্রের পথপ্রদর্শক বলা হয়। তিনি ক্রিপড পালস অ্যামপ্লিফিকেশন তৈরি করেছেন। এ পদ্ধতিতে উচ্চ ঘনত্বের আলট্রাশট পালস তৈরি করা যায়, যা লেজার সার্জারিসহ বিভিন্ন গবেষণায় কাজে লাগে। তিনি বর্তমানে ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ ও জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন। ১৯৮১ সালে ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ফিজিকসে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
১৯৮৯ সালে রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তাঁর ডক্টোরাল থিসিসের বিষয় ছিল ‘ডেভেলপমেন্ট অব অ্যান আলট্রা-ব্রাইট লেজার অ্যান্ড অ্যান অ্যাপ্লিকেশন টু মাল্টি-ফোটন আয়োনাইজেশন’। তাঁর সুপারভাইজার ছিলেন জেরার্ড মৌরৌ। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সময় তাঁরা ক্রিপড পালস অ্যাম্পলিফিকেশন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত কানাডার ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলে গবেষক হিসেবে কাজ করেন ডোনা।
১৯৯২ সালে পদার্থবিদ হিসেবে লরেন্স লাইভমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির লেজার বিভাগে যোগ দেন। ১৯৯৭ সালে ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এর আগে ২০১৩ সালে অপটিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডোনা। এ ছাড়া ২০০৪ থেকে ২০১০ পর্যন্ত অপটিকস লেটার্স সাময়িকীর টপিক্যাল সম্পাদক ছিলেন।
প্রধান কার্যালয়: শিমুল লজ, ১২/চ/এ/২/৪ (২য় তলা), রোড নং ৪, শেরেবাংলা নগর,শ্যামলী,ঢাকা.
বার্তা বিভাগ-01763234375 অথবা 01673974507, ইমেইল- sangbadgallery7@gmail.com
আঞ্চলিক কার্যালয়: বঙ্গবন্ধু সড়ক, আধুনিক সদর হাসপাতাল সংলগ্ন, বাসস্ট্যান্ড, ঠাকুরগাঁও-৫১০০
2012-2016 কপি রাইট আইন অনুযায়ী সংবাদ-গ্যালারি.কম এর কোন সংবাদ ছবি ভিডিও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথায় প্রকাশ করা আইনত অপরাধ
Development by: webnewsdesign.com