প্রধানমন্ত্রী নজর দিয়েছেন কোটা সংস্কারের বিষয়টিতে

মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল ২০১৮ | ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ |

প্রধানমন্ত্রী নজর দিয়েছেন কোটা সংস্কারের বিষয়টিতে
প্রধানমন্ত্রী নজর দিয়েছেন কোটা সংস্কারের বিষয়টিতে

সংবাদ গ্যালারি ডেস্ক: কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশে আন্দোলন যাতে ছড়িয়ে না পড়তে পারে সেদিকে কড়া নজর রাখছে সরকার। গত রবিবার রাজধানীর শাহবাগে গড়ে ওঠা অবরোধ থেকে প্রতিবাদের যে আগুন ছড়াচ্ছিল, তা নেভাতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তোড়জোড় শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের দাবির বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী নিজ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চান। বৈঠকে কোটা সংস্কারের বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার সিদ্ধান্ত হয়।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রবিবার দুপুর থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন তীব্র হওয়ায় জনপ্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সচিবরা এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়েই মন্ত্রিসভা বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ব্যাখ্যা চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা পুরো পরিস্থিতি তুলে ধরেন।


বৈঠকে জনপ্রশাসনসচিব মোজাম্মেল হক খান প্রধানমন্ত্রীকে জানান,  কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে জাতীয় মেধাতালিকা থেকেই নিয়োগ দেওয়া হয়। ৩৩তম বিসিএসের ৭৭.৪০ শতাংশ পদ মেধা কোটা দিয়ে পূরণ করা হয়েছে। আর ৩৫তম বিসিএসে ৬৭.৪৯ শতাংশ এবং ৩৬তম বিসিএসে ৭০.৩৮ শতাংশ পদ মেধা থেকে পূরণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এসব তথ্যসহ পুরো পরিস্থিতি আন্দোলনকারীদের কাছে তুলে ধরার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার কথা বলেন। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী এসব তথ্য জানান। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এবং মোজাম্মেল হকও কোটা নিয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।

জনপ্রশাসনসচিব নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের জানান, মেধা কোটা সব জায়গায় বহাল রয়েছে। যেকোনো নিয়েগের ক্ষেত্রে মেধাবীরা আগে চাকরি পাচ্ছেন। বিভিন্ন কোটার মধ্যেও মেধা কোটা বহাল রয়েছে। একসময় মেধা কোটা ছিল মাত্র ২০ শতাংশ। বাড়তে বাড়তে সেটা ৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে। একসময় নিয়ম ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যোগ্য লোক না পাওয়া গেলে পদ সংরক্ষণের। অর্থাৎ সেই পদ শূন্য থাকবে। এরপর বিভিন্ন সেক্টরে সমস্যা দেখা দেয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেসব সমস্যা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করে। একপর্যায়ে পদ সংরক্ষণের বিধান তুলে নেওয়া হয়। এটাও বড় এক সংস্কার। যারা আন্দোলন করছে তারা আসলে কী চাচ্ছে? কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে কিভাবে তুলে আনা হবে যদি কোটা পদ্ধতি না থাকে?


এর আগে মন্ত্রিপরিষদসচিব শফিউল আলম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করবে। তিনিও বলেন, কোটায় পদ না পেলে ফাঁকা পদগুলো মেধাতালিকা থেকে পূরণের সিদ্ধান্তই একটা সংস্কার। এ কারণে মেধাবীরা খুব একটা বঞ্চিত হন না। কোটার কারণে মেধাবীরা খুব বেশি বঞ্চিত হননি দাবি করে তিনি গত তিনটি বিসিএসের নিয়োগে কত শতাংশ মেধাবী নিয়োগ পেয়েছেন, সেই তথ্য তুলে ধরেন।

মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, মেধাবীরা কখনো অবহেলিত হয় না। মহিলা কোটায় যদি ১০টি পদ থাকে, এই ১০টির মধ্যে তারাই আসবে যারা লিখিত বা অন্যান্য সব ক্যাটাগরিতে ভালো করেছে; তারাই আসবে যারা ওপরের দিকে আছে। মহিলাদের মধ্যে যারা মেধাতালিকায় ভালো করবে তারাই চাকরি পাবে। এমন নয় যে যারা মেধাবী তারা অবহেলিত হয়ে যাচ্ছে, পেছনে পড়ে যাচ্ছে। জেলা কোটার ক্ষেত্রেও তাই। জেলার মধ্যে যারা ভালো করবে তারা আসবে, প্রত্যেক সেক্টরেই মেধার মধ্যে যারা অগ্রসর তারাই আসবে, কোটার দ্বারা কারো মেধা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না।


মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যখন যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না, তখন সেসব পদ অন্যভাবে পূরণ করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদসচিব। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত—কোটায় যদি যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না যায়, মেধাতালিকার শীর্ষে অবস্থানকারীদের দিয়ে তা পূরণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, একটা সংস্কার অলরেডি হয়ে গেছে। সার্কুলার দিয়ে কোটা চলছে, সার্কুলার সংশোধন করা হয়েছে। এতে মেধাবীরা যথেষ্ট স্কোপ পাচ্ছে। কোটার কারণে যারা মেধাবী তারা খুব বেশি বঞ্চিত হয়নি।

বর্তমানে দেশে ৫ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, নারী ও জেলা কোটা ১০ শতাংশ করে। সব মিলিয়ে কোটার জন্য ৫৫ শতাংশ। যারা এর কোনো শ্রেণিতে পড়ে না, তাদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে বাকি ৪৫ শতাংশের জন্য।

মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মেধার প্রতিযোগিতা হচ্ছে। তাদের মধ্যে যারা মেধায় অগ্রসর, ওপরের দিকে তারাই আসবে। এখানে মেধাকে অবহেলা করা হচ্ছে না। একজন সাংবাদিক মন্ত্রিপরিষদসচিবকে বলেন, কোটায় নিয়োগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি যে পরিপত্র দেয়, তার পরই নতুন করে এ আন্দোলন শুরু হয়েছে। জবাবে শফিউল আলম বলেন, ‘পরিপত্রটা আমরা পরীক্ষা করে দেখব।’

গত বৃহস্পতিবার কোটার ফাঁকা পদ পূরণ নিয়ে একটি ব্যাখ্যা দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, সব ধরনের সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার কোনো পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা না গেলে সেগুলো মেধাতালিকার শীর্ষে থাকা প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ করা হবে। এক মাস আগে নেওয়া এ সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন করবে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদগুলো বিশেষ কোটার অধীন কোনো জেলার বিতরণ করা পদের সংখ্যা থেকে যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা কম হলে ওই বিশেষ কোটার অপূরণ থাকা পদগুলো জাতীয়ভিত্তিক নিজ নিজ বিশেষ কোটার (অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী) জন্য করা জাতীয় মেধাতালিকা থেকে পূরণ করতে হবে।

মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ কোটার (মুক্তিযোদ্ধা, নারী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, এতিম ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা সদস্য) কোনো পদ যোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা সম্ভব না হলে অপূরণকৃত পদগুলো জেলার প্রাপ্যতা অনুযায়ী নিজ নিজ জেলার সাধারণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে মেধাতালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ করতে হবে। কোটাসংক্রান্ত অন্যান্য বিধান অপরিবর্তিত থাকার কথা বলা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায়।

আপনার মুল্যবান মতামত দিন......

comments

প্রধান কার্যালয়: শিমুল লজ, ১২/চ/এ/২/৪ (২য় তলা), রোড নং ৪, শেরেবাংলা নগর,শ্যামলী,ঢাকা‌.
বার্তা বিভাগ-01763234375 অথবা 01673974507, ইমেইল- sangbadgallery7@gmail.com

আঞ্চলিক কার্যালয়: বঙ্গবন্ধু সড়ক, আধুনিক সদর হাসপাতাল সংলগ্ন, বাসস্ট্যান্ড, ঠাকুরগাঁও-৫১০০

2012-2016 কপি রাইট আইন অনুযায়ী সংবাদ-গ্যালারি.কম এর কোন সংবাদ ছবি ভিডিও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথায় প্রকাশ করা আইনত অপরাধ

Development by: webnewsdesign.com