পহেলা বৈশাখের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। তাই বাঙালির এই প্রাণের উৎসবকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার বসন্তপুর পালপাড়া (কুমারপাড়া) মৃৎ শিল্পীরা। বাহারি মাটির তৈরি খেলনা আর তৈজসপত্র তৈরিতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা।
রাজশাহী মহানগরী থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে পবা উপজেলা নওহাটা পৌর সভায় বসন্তপুর পালপাড়া। নগরী থেকে বাসে যাত্রা করলে বাগধানীতে নামতে হবে। এ সুযোগে বাগধানিতে ঐতিহ্যবাহি পুরাকীর্তির মসজিদ দেখা যাবে। বাগধানিতে নেমে ১ কিলোমিটার দক্ষিনে পালপাড়া। এদিকে মাটির তৈরি এসব পণ্য কিনতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এসে ভীড় করছেন কুমারপাড়ায়।
মৃৎশিল্পী সুশান্ত কুমার পাল ও সঞ্জয় কুমার পালসহ অনেকে জানান, বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ। আবহমানকাল থেকে গ্রামগঞ্জে বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ঐতিহ্য গতভাবে এসব মেলার প্রাণ হচ্ছে মাটির তৈরি হাতি-ঘোড়া-পুতুলসহ বাহারি তৈজসপত্র। শিশুদের কাছে এসব খেলনার জুরি নেই। বৈশাখ থেকে গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে মেলা উৎসব শুরু হয়। চলে পুরো বছর জুড়ে। তাই তারা রং-তুলি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে জানান। তবে আগের মত লাভ করা যায় না।
তারা বলেন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসটা তাদের জন্য ভিন্ন। এ সময় তারা মাটির বিভিন্ন বর্ণিল খেলনা আর তৈজসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। বেচাকেনাও অন্য সময়ের চেয়ে শতগুন ভাল হয়। সুশান্ত কুমার পাল ও সঞ্জয় কুমার পাল এসব মাটির তৈরী রকমারি তৈজসপত্র ঢাকায় বিক্রি করে থাকেন।
গ্রামীণ বিবাহে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও শখের হাড়ির কদর ছিল অন্য রকম। নতুন শখের হাড়িতে করেই পিঠা-পুরি ও রসগোল্লা আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। আগে শখের হাড়িই ছিল আচার অনুষ্ঠানের অনুসঙ্গ উপাদান।
বসন্তপুর পালপাড়ায় ঢাকা থেকে আসা এক পাইকার বলেন, প্রতি বছরই চৈত্র মাসের শেষ সময়ে এই কুমার পাড়ায় আসেন। বাহারি রঙের খেলনা বিশেষ করে হাতি, ঘোড়া, গরু, পাখি, পুতুল, ব্যাংক, হাড়িপাতিল, চুলা ইত্যাদি কিনে গ্রামগঞ্জের মেলা-বান্নীতে তারা এসব পণ্য বিক্রি করেন। বৈশাখ থেকে শুরু করে মৌসুমের একটা বড় সময় জুড়ে তারা এসব পণ্য বিক্রি করে বেশ লাভবান হন।
শিক্ষক আনন্দ কুমার পাল জানান, মৃৎ শিল্পীরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে পৈত্রিক এ পেশাকে কোনও ক্রমে টিকিয়ে রেখেছে। নতুন প্রজন্মের কেউ তাদের পূর্ব পুরুষদের এই পেশায় আসছেন না। তাই এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। তা না হলে এই শিল্প একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতৃবৃন্দ জানান, হাজার বছরের সংস্কৃতির ঐতিহ্যের অংশ মৃৎশিল্প। এই মৃত্তিকা শিল্পীদের টিকিয়ে রাখা সম্ভব না হলে বাঙালির ঐতিহ্য নষ্ট হবে। আমাদের সংস্কৃতি বিলুপ্ত হবে।
স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জেলার অন্যতম পবা উপজেলার বসন্তপুর কুমারপাড়ায় অন্তত ২৫টি পরিবারের একশো’ মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তবে অন্যরা হাড়ি, কলস, নাইন ও টব তৈরী করলেও মৃৎশিল্পী সুশান্ত কুমার পাল ও সঞ্জয় কুমার পাল মাটি দিয়ে প্রকৃতির রুপ সৌন্দর্য্যে আল্পনা দিয়ে রক্ষা করতে চাইছেন অতীত ঐতিহ্য।
প্রধান কার্যালয়: শিমুল লজ, ১২/চ/এ/২/৪ (২য় তলা), রোড নং ৪, শেরেবাংলা নগর,শ্যামলী,ঢাকা.
বার্তা বিভাগ-01763234375 অথবা 01673974507, ইমেইল- sangbadgallery7@gmail.com
আঞ্চলিক কার্যালয়: বঙ্গবন্ধু সড়ক, আধুনিক সদর হাসপাতাল সংলগ্ন, বাসস্ট্যান্ড, ঠাকুরগাঁও-৫১০০
2012-2016 কপি রাইট আইন অনুযায়ী সংবাদ-গ্যালারি.কম এর কোন সংবাদ ছবি ভিডিও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথায় প্রকাশ করা আইনত অপরাধ
Development by: webnewsdesign.com