বুধবার, ০৩ জানুয়ারি ২০১৮ |
১১:২৮ পূর্বাহ্ণ |
কোনো রকমে একটি টিনের ঘর তুলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে সরকারি বই, বিস্কুট তুলে চলছে হরিলুট। নেই শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষার উপকরণ এমনকি মাসে একবারও ওঠেনা জাতীয় পতাকা। নামসর্বস্ব গঁজিয়ে ওঠা এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা বিস্তারের নামে চলছে সহজে সরকারি চাকুরি পাওয়া ও স্কুল, মাদ্রাসা সরকারি করণের অসুস্থ প্রতিযোগিতা।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দেওদাপাড়া, ঘোনাবাড়ী, পূর্ব জগতবেড়, ইসলামনগর, জমগ্রাম ও রহমতপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পানবাড়ী দিঘলটারী, কচুয়ারপাড়, বাংলাবাড়ী তাজিমুদ্দিন জহিরুদ্দিন, টামতলীরহাট মনিরিয়া, রাধানাথ শমসেরীয়া, মস্তবহাট সিদ্দিকীয়, বৈরাগীরহাট স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলো কোনো শিক্ষার্থী ছাড়াই কাগজে কলমে চলছে বছরের পর বছর। কোনো প্রকার প্রয়োজন ছাড়াই যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এসব স্কুল ও মাদ্রাসা। সবারই চেষ্টা কীভাবে সরকারি করা যায়। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত চলছে জোর লবিং। হাজার হাজার টাকা স্কুল, মাদ্রাসার ফাইল সরকারি করণে এগুনোর নামে খরচ করছে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক।
পত্রিকায় ভুয়া বিজ্ঞাপন, ব্যাক ডেট, ভুয়া তারিখ, জাল সই, দলিল করে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় ভুয়া স্কুল আর ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সংখ্যা অন্তত ৫০টি। এ সকল বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা শুধু মাঠে একটি টিনের ঘর। মেঝে কাঁচা। অর্থলোভী কিছু ব্যক্তি এগুলোকে স্কুল, ইবতেদায়ী মাদ্রাসা নাম দিলেও দেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোঝার কোনো উপায় নেই। শিক্ষার্থীদের বসার কোনো বেঞ্চ নেই। অফিস নেই। শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই। অথচ ৬/৭ বছর থেকে কাগজে- কলমে এসকল বিদ্যালয়ে পাঠদান অব্যাহত বলে দেখানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ছাত্র/ ছাত্রীদের ভুয়া নাম ব্যবহার করে বছরের শুরুতেই বইসহ শিক্ষা উপকরণ গ্রহণ এমনকি শিক্ষার্থীদের নামে বিস্কুট তুলে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলো থেকে প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় ২ থেকে ৬ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেশীরা শিক্ষকদের চিনেন না। দু’ একজন শিক্ষার্থীর দেখা পেলে ছাত্র/ছাত্রীরা শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে চিনেন না। কি ক্লাস নেন, কী নাম সেটিও বলতে পারেন না। আর কাগজে- কলমে বেশ গর্জিয়াসভাবে চলছে প্রাথমিক শিক্ষার স্কুল ও মাদ্রাসা গুলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, টাকা দিয়ে বহুদিন ধরে শিক্ষক হিসেবে আছি। পাটগ্রাম উপজেলায় একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পাটগ্রাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস অনুমোদন দিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠায়। জেলা শিক্ষা অফিসার মন্ত্রণালয়ে পাঠান। দিন যাইতে আছে কোনো খবর নাই। একাধিক স্কুল জমির দলিল টেম্পারিং করে পুরাতন দেখিয়ে ফাইল জমা দিয়েছে।
পাটগ্রাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম মোস্তফা বলেন, কিছুটা শুনেছি, পুরোপুরি এসব জানি না। আমার অফিসের লোকবল কম, আমি সরেজমিনে বিষয়টি দেখব। আমার আগের অফিসার ভাল বলতে পারবেন।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর কুতুবুল আলম বলেন, কেউ এ ধরনের অভিযোগ করেনি। বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। জরুরিভাবে তদন্ত করে ভুয়া স্কুল, মাদ্রাসা থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
comments