রাজশাহী প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মাদকের করাল গ্রাসে আমাদের তরুণ সমাজ আজ বিপদাপন্ন। এই ভয়াল থাবা থেকে আমাদের সমাজকে বাঁচাতে হবে। মাদক সেবনকারী, ব্যবসায়ী, উৎপাদক, সরবরাহকারী সবার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের পুলিশ যেমন জঙ্গি দমনে সফল হয়েছে, তেমনি মাদক থেকে আমাদের তরুণ সমাজকে রক্ষায় সফল হতে হবে।
গতকাল বুধবার রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে শিক্ষনবিশস সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে এ সব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বেলা ১১টা ২০ মিনিটে হেলিকপ্টার যোগে সারদা পুলিশ একাডেমিতে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। ১১টা ৪৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজে যোগ দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজের প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ এবং নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদেশ্যে ভাষণ দেন।
৩৫তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের ১২৩ জন সহকারী পুলিশ সুপুর এই ব্যাচে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে ১৮ জন নারী। শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রশিক্ষণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারি এক নারীসহ তিন নবীন পুলিশ কর্মকর্তাকে ক্রেস্ট প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ সারা বিশ্বের সমস্যা। আমরা দক্ষতার সঙ্গে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের অব্যাহত সাফল্য শুধু দেশেই নয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এদেশের মাটিতে জঙ্গি, সন্ত্রাসী, যুদ্ধাপরাধীদের স্থান হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী অপরাধের ধরণ দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। নিত্যনতুন অপরাধ দমনে পুলিশ সদস্যদের আরও তৎপর হতে হবে। বিশেষ করে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে দক্ষ হতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করার লক্ষে আমাদের সরকার আইন-শৃঙ্খলা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থকে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশের আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে উন্নয়নকে টেকসই করতে চাই। এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ পুলিশের নবীন কর্মকর্তারা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ‘রূপকল্প’-২০১২ এবং ‘রূপকল্প’-২০৪১ বাস্তবায়নে আগ্রহী ভূমিকা পালন করবেন।
নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। মানুষ বিপদের সময় পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য আসে। তাই সেবা ও মানবিক আচরণের মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট থাকবেন। দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইন শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সমাজের নারী, শিশু ও প্রবীণদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে। সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলে জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশ গঠনে আপনাদের অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, ২০০৯ সাল থেকে পুলিশের আধুনিকায়নে কাজ করে চলেছি। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশে ৫০ হাজার জনবল সৃজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইতোমধ্যে ৪৬ হাজার পদ সৃজন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় যানবাহন ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে, নতুন নতুন ইউনিট গঠন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে রংপুর রেঞ্জম রংপুর আরআরএফ, ময়মনসিংহ রেঞ্জ, নারী আর্মম পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ১২ আমর্ড পুলিশ ব্যাটলিয়ন গঠনসহ নতুন নতুন থানা, ফাড়ি ও তদন্তকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। গাজিপুর ও রংপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ গঠন করা হয়েছে। জঙ্গী ও সন্ত্রাস নির্মূলে এন্টি টেরিরেজম ইউনিট গঠন করা হয়েছে। ইন্ড্রাট্রিয়াল পুলিশ ইউনিট গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিশেসায়িত পুলিশ ইউনিপ যেমস, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ এবং দুটি স্পেশাল সিকিউরিটি এন্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের সেবা জনগণের দৌরগোড়ায় পৌছে দিতে জাতীয় জরুরী সোব ৯৯৯, ডিবি পুলিশ হেল্প লাইন ও অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্ভিস চালু করা হয়েছে। পুলিশের বিভিন্নস্তরে নারীদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে ট্রাফিক সার্জেন্ট পদেও নারীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা সর্বপ্রথম পুলিশে নারীদের নিয়োগ দেন স্মরণ করিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা পুলিশের আবাসন, রেশন, চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি, উন্নত প্রশিক্ষণ, লজিস্টিক, যানবাহন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এ উত্তরণ অমাদের সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফসল। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। উন্নয়নের এ অভিযাত্রা অব্যাহত থাকলে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা সক্ষম হব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী চৌকস, পেশাদার, দক্ষ ও জনবান্ধন পুলিশ সার্ভিস গঠনে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে আমরা পুলিশকে আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ করাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী, সারদার সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। প্রশিক্ষণের গুণগতমান বজায় রাখতে এ একাডেমীতে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য শ্রেণিকক্ষ, মাঠ এবং আবাসনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাসহ অবকাঠামোগত আরও উন্নয়ন প্রয়োজন। তাই সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কার, জনবল বৃদ্ধি প্রয়োজনীয় যানবাহন, সরঞ্জামাদি এবং লজিস্টিক সরবরাহে অব্যাহত রেখেছি। যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিতকল্পে প্রস্তাবিত একাডেমী সংলগ্ন পদ্মা নদী তীরবর্তী ১০০ একর খাস জমি বরাদ্দের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। একাডেমীর আধুনিক শ্রেণিকক্ষ, কম্পিউটার ল্যাব, ল্যাংগুয়েজ ল্যাব, ফরেনসিক ডেমোনেস্টেশন ল্যাব, ড্রাইভিং ও শ্যুটিং সিমিউলেটর যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। পুলিশের সকল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উন্নয়ন করা সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।
শিক্ষানবিস সহকারি পুলিশ সুপারদের সমাপনী কুচকাওয়াজে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্ঠা এইচ টি ইমাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, ভূমিমন্ত্রী সামশুর রহমান শরফি ডিলু, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রমানিক এমপি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য ও রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমীর অধ্যক্ষ নাজিবুর রহমান এনডিসি, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নুর-উর- রহমান, ফারুক চৌধূরী এমপি, বেগম আক্তার জাহান এমপি, আয়েন উদ্দিন এমপি, এনামুল হক এমপি।
প্রধান কার্যালয়: শিমুল লজ, ১২/চ/এ/২/৪ (২য় তলা), রোড নং ৪, শেরেবাংলা নগর,শ্যামলী,ঢাকা.
বার্তা বিভাগ-01763234375 অথবা 01673974507, ইমেইল- sangbadgallery7@gmail.com
আঞ্চলিক কার্যালয়: বঙ্গবন্ধু সড়ক, আধুনিক সদর হাসপাতাল সংলগ্ন, বাসস্ট্যান্ড, ঠাকুরগাঁও-৫১০০
2012-2016 কপি রাইট আইন অনুযায়ী সংবাদ-গ্যালারি.কম এর কোন সংবাদ ছবি ভিডিও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথায় প্রকাশ করা আইনত অপরাধ
Development by: webnewsdesign.com