রাজশাহীতে চলছে আম পাড়ার উৎসব

সোমবার, ২১ মে ২০১৮ | ৬:১৭ অপরাহ্ণ |

রাজশাহীতে চলছে আম পাড়ার উৎসব
রাজশাহীতে একটি আম বাগানে আম পাড়ার সময়, ছবি: রিজভী আহমেদ, রাজশাহী থেকে

রাজশাহী প্রতিনিধি: অপরিপক্ব আমের বাজারজাত ঠেকাতে গাছ থেকে আম পাড়ার সময়সীমা বাঁধা। যে আম যত আগে পাকে, সে আম পাড়ার দিন ঠিক করা হয়েছে তত আগে। সে অনুযায়ী গোপালভোগ জাতের আম পাড়ার দিন ঠিক ছিল গত রবিবার। উন্নতজাতের আমগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে এই আমটিই প্রথম পাড়ার অনুমতি ছিল রাজশাহী অঞ্চলের চাষিদের।

গোপালভোগের নিষেধাজ্ঞা কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গতকাল থেকেই চাষিরা এই আম নামানো শুরু করেছেন। গতকাল সকাল থেকেই বাগানে বাগানে শুরু হয় আম পাড়ার উৎসব। দুপুরে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজারের কয়েকটি ফলের দোকানে গায়ে আঠা লেগে থাকা গোপালভোগ আম বিক্রি হতে দেখা যায়।


বিক্রেতা শাহীন আলম জানালেন, কয়েকদিন আগেই আঁটি আম বাজারে এসেছে। তবে উন্নতজাতের আম গোপালভোগই প্রথম। প্রতিবছরই আমটির চাহিদা থাকে ভালো। তাই এবার পুঠিয়ার একটি বাগানমালিককে তিনি আগাম টাকা দিয়ে রেখেছিলেন। নিষেধাজ্ঞা কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাগানমালিক আম নামিয়ে তার দোকানে দিয়ে গেছেন।

শাহীনের দোকানে দেখা যায়, গায়ে বোটা ও আঠা লেগে থাকা তাজা আম। শাহীন বলেন, আমের বাইরের খোসা সবুজ হলেও ভেতরটা হলদে। বাসায় দু’একদিন রাখলে এমনিতেই পেকে যাবে। এ জন্য কোনো রাসায়নিক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। প্রতিকেজি আম তিনি বিক্রি শুরু করেছেন ১২০ টাকা দরে। সরবরাহ বাড়লে আমের দাম কিছুটা কমবে বলেও জানান তিনি।


বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম এলাকার আম চাষি আমিনুল ইসলাম জানান, রোববার তিনি তার বাগানের দুটি গাছ থেকে চার মণ গোপালভোগ আম পেড়েছেন। ১শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন ১৬ হাজার টাকায়। আমিনুল জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার গাছে সবচেয়ে বেশি মুকুল এসেছিল। তাই ফলন হয়েছে বেশি। তবে মৌসুমের শুরুতেই টানা কয়েকটি ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আমের ক্ষতি হয়েছিল।

এদিকে রাজশাহীর বাগানগুলোতে এখন আম ঝুলছে থোকায় থোকায়। নুইয়ে পড়েছে গাছের ডাল। তা দেখে মুগ্ধ চাষি। মুখে হাসি নিয়ে তারা বিভিন্ন জাতের আম পাড়ার অপেক্ষায়। জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে বাজারে আসবে নানাজাতের আম। এর মধ্যে হিমসাগর, ক্ষিরসাপাত ও লবণভোগ আসবে ১ জুন থেকে। আর ল্যাংড়া নামবে ৬ জুনের পর। এছাড়া আম্রপালি ও ফজলি ১৬ জুন এবং আশ্বিনা জাতের আম ১ জুলাইয়ের আগে চাষিরা গাছ থেকে পাড়তে পারবেন না।


জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের বলেন, যখন বাজারে অনেক আগে কিংবা পরে আম পাওয়া যায়, তখন অনেকে মনে করেন যে এতে রাসায়নিক দেওয়া আছে। ক্রেতাদের এই ভীতি দূর করতেই আম পাড়ার একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নেওয়া হয়েছিল। এতে কেউ মনে করবে না যে এই আম এখন গাছে থাকার কথা নয় অথবা এতো আগে স্বাভাবিকভাবে পাকার কথা নয়। এতে চাষিদেরই লাভ।

জেলা প্রশাসক জানান, ঠিক করে দেওয়া সময় অনুযায়ী আম নামানো হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হচ্ছে। এ জন্য প্রতিটি উপজেলার নিরুাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কৃষি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর আমের বাজার জমে উঠলে জেলা প্রশাসন থেকে তিনজন নিরুাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিনে আট ঘণ্টা করে ২৪ ঘণ্টা পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে দায়িত্ব পালন করবেন।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলায় ১৬ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমিতে আম বাগান ছিল। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৪৬৩ হেক্টর। আর বাগানে রয়েছে ২৪ লাখ ২৬ হাজার ১৮৯টি আম গাছ। কোনও দুর্যোগ না হলে এবার ২ লাখ ১৭ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন আশ্বিনা, ল্যাংড়া, লবণভোগ, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, আম্রপালি, তোতাপরী ও স্থানীয় জাতের গুটি আমের ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, আর কয়েকদিন আবহাওয়া ভালো থাকলে আম নিয়ে চাষিরা এবার ভালো লাভ করবেন। এবার বাঘা উপজেলার ১৪ জন চাষির সঙ্গে আম রপ্তানিকারকরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। চাষিরা ২৬টি শর্ত মেনে আম উৎপাদনে রাজি হয়েছেন। এবার ১শ’ টন আম বিদেশে পাঠানোর লক্ষ মাত্রা রয়েছে।#

রিজভী আহমেদ
রাজশাহী

আপনার মুল্যবান মতামত দিন......

comments

প্রধান কার্যালয়: শিমুল লজ, ১২/চ/এ/২/৪ (২য় তলা), রোড নং ৪, শেরেবাংলা নগর,শ্যামলী,ঢাকা‌.
বার্তা বিভাগ-01763234375 অথবা 01673974507, ইমেইল- sangbadgallery7@gmail.com

আঞ্চলিক কার্যালয়: বঙ্গবন্ধু সড়ক, আধুনিক সদর হাসপাতাল সংলগ্ন, বাসস্ট্যান্ড, ঠাকুরগাঁও-৫১০০

2012-2016 কপি রাইট আইন অনুযায়ী সংবাদ-গ্যালারি.কম এর কোন সংবাদ ছবি ভিডিও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথায় প্রকাশ করা আইনত অপরাধ

Development by: webnewsdesign.com