রাজশাহীতে জমে উঠেছে আম বাজার

শুক্রবার, ০১ জুন ২০১৮ | ৮:১৮ অপরাহ্ণ |

রাজশাহীতে জমে উঠেছে আম বাজার
রাজশাহীর আম বাজার

রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীতে জমে উঠেছে আমের কেনাবেচা। দেশের অন্য অঞ্চলের ক্রেতারা এখন রাজশাহীর বাজারে ভিড় জমাচ্ছেন। ধুমসে চলছে কেনাকাটা। সেইসঙ্গে কুরিয়ারের মাধ্যমে স্থানীয়রা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাচ্ছেন রাজশাহীর সুস্বাদু আম। রাজশাহীর নগরীর উপকণ্ঠে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে সবচেয়ে বেশি আম কেনাবেচা হয়।

এছাড়াও নগরীর সাহেববাজার, হড়গ্রাম, উপশহর, শালবাগানে বিভিন্ন জাতের আম নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা বসে থাকেন। আবার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকে ফেরি করেও আম বিক্রি করছেন।


আম বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় বানেশ্বর বাজারের ইজারাদার মন্টু সরকারের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রশাসনের নির্দেশ পাওয়ার পর কৃষকরা আম আনা শুরু করেছেন। গত ৮-১০ দিনের মধ্যে বানেশ্বর বাজারে আম আসতে শুরু করেছে। এখন বাজার জমজমাট। কারণ গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাত, রাণীভোগ, এবং স্থানীয় গুটি জাতের সব আম গাছে পেকে গেছে। তাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আমচাষিরা প্রত্যেক দিনই গাছ থেকে আম নামিয়ে বাজারে নিয়ে আসছেন। বাজার এখন আমে জমজমাট। এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ ট্রাক আম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে।

বানেশ্বর বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ফরমান আলী জানান, গোপালভোগ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১ হাজার থেকে ১৭০০ টাকা পর্যন্ত। আর স্থানীয় গুটি জাতের সব আম ৬০০ থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, এই বাজারে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৫০০ মণ আম আসছে। সব ব্যবসায়ী মিলে প্রায় ১০ ট্রাকের মতো আম দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন। উন্নতমানের অন্য জাতের আম উঠলে আর ৭ থেকে ৮ দিন পরেই ব্যাপকভাবে জমবে আমের বেচাকেনা।


আরেক বিক্রেতা খাদেমুল জানান, বাজারে এখন গুটি জাতের আম পর্যাপ্ত রয়েছে। এই সপ্তাহ গেলেই আরও বিভিন্ন জাতের আম উঠতে শুরু করবে। এখন গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাত, গুটি জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে। গোপালভোগ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১৭০০ টাকা পর্যন্ত, ক্ষীরসাপাত ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায়, আর গুটি জাতের সব আম ৮০০, ৯০০, ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকা থেকে রাজশাহীতে চাকরির কাজে এসেছেন আবু তৈয়ব রহমান। কাজ শেষ ঢাকায় ফেরার আগে রাজশাহীর আম কিনে পরিবারের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানালেন, জাত হিসেবে আম তেমন চিনতে পারেন না তিনি। তবে গোপালভোগের কথা বেশি শুনেছেন। তাই এক মণ মাঝারি সাইজের আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বড় সাইজের আমগুলোর দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে।


শিক্ষক এবং বড় ভাইদের জন্য আম কিনে ঢাকায় পার্সেল করে পাঠাবেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুর সবুর। তিনি বলেন, আমার শিক্ষক এবং এক বড় ভাই ফোন দিয়ে আম পাঠানোর জন্য বলেছেন। তাই আজকে সময় নিয়ে বানেশ্বর বাজারে আম কিনতে এসেছি। দুই মণ গোপালভোগ আম কিনে কুরিয়ারের মাধামে পাঠাবো।

নগরীর শালবাগান এলাকার ফল ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আজকের (১ জুন) বাজার অনুযায়ী এই বাজারে গোপালভোগ ২০০০ থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করছি।’

বানেশ্বর বাজারের চেয়ে শালবাগানে আমের দাম বেশি কেন? এই বিষয়ে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমার আমগুলো নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাগান থেকে নিয়ে আসা। তাই অন্য বাজারের চেয়ে আমাদের আমগুলোর স্বাদ ও সাইজ অনুযায়ী ভালো হওয়ার কারণে দাম বেশি। আম এখানে কিনে আমরাই পাঠানোর ব্যবস্থা করে থাকি। এজন্য ঢাকায় পাঠানোর জন্য সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস কেজিতে ১২ টাকা, এসএ পরিবহন ১৫টা ও অন্যান্য কুরিয়ার সার্ভিসে ১০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।’

রাজশাহী নগরীর সাহেবাজার এলাকার আরেক ব্যবসায়ী সাজদার আলী জানান, আম পরিমাপের যন্ত্রে বিএসটিআই’র সিল না থাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আমাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিসের ম্যানেজার আলম হোসেন বলেন, ব্যাপকভাবে আম পাঠানো শুরু হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মানুষ আম পাঠাচ্ছেন। আমরা কেজি দরে ১২ টাকা করে ঢাকায় আম পাঠানোর রেট রাখছি।

কৃষি সম্প্রসারণ রাজশাহী অঞ্চল অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ২৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। আর এই জেলায় অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। একইভাবে নওগাঁ জেলায় ১২ হাজার ৬৭১ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৪২ মেট্রিক টন, নাটোরে ৪ হাজার ৮২৩ হেক্টর জমিতে ৫৬ হাজার ২১ মেট্রিক টন আমের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর রাজশাহী জেলায় ১৬ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৪৬৩ হেক্টর আম বাগান। আর বাগানে রয়েছে ২৪ লাখ ২৬ হাজার ১৮৯টি আম গাছ। কোনও দুর্যোগ না হলে এবার ২ লাখ ১৭ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন আশ্বিনা, ল্যাংড়া, লক্ষণভোগ, ক্ষীরসাপাত,আম্রপালি, তোতাপরি ও স্থানীয় জাতের গুটি আমের ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জেলার হিসাব মতে, সবচেয়ে বেশি আমের গাছ রয়েছে চারঘাট ও বাঘা উপজেলায়। এরমধ্যে চারঘাট উপজেলায় ৩ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৪৫০টি ও বাঘা উপজেলায় ৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৪টি গাছ আছে।

আপনার মুল্যবান মতামত দিন......

comments

প্রধান কার্যালয়: শিমুল লজ, ১২/চ/এ/২/৪ (২য় তলা), রোড নং ৪, শেরেবাংলা নগর,শ্যামলী,ঢাকা‌.
বার্তা বিভাগ-01763234375 অথবা 01673974507, ইমেইল- sangbadgallery7@gmail.com

আঞ্চলিক কার্যালয়: বঙ্গবন্ধু সড়ক, আধুনিক সদর হাসপাতাল সংলগ্ন, বাসস্ট্যান্ড, ঠাকুরগাঁও-৫১০০

2012-2016 কপি রাইট আইন অনুযায়ী সংবাদ-গ্যালারি.কম এর কোন সংবাদ ছবি ভিডিও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথায় প্রকাশ করা আইনত অপরাধ

Development by: webnewsdesign.com