নিষেধাজ্ঞা সত্বেও টিএমএসএস’র বিরুদ্ধে জোরপূর্বক কিস্তি আদায়ের অভিযোগ…

শনিবার, ০৬ জুন ২০২০ | ৯:৪৯ অপরাহ্ণ |

নিষেধাজ্ঞা সত্বেও টিএমএসএস’র বিরুদ্ধে জোরপূর্বক কিস্তি আদায়ের অভিযোগ…
প্রতিনিধির পাঠানো তথ্য ও ছবিতে ডেস্ক রিপোর্ট

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ঃ

করোনাভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে লকডাউনের কারণে সরকার ঘোষিত সবধরণের ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি আদায়
বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে সীমিত পরিসরে অফিস-আদালত খুলে দেয়ার পর ঠাকুরগাঁওয়ে ঋণদানকারী সংস্থা (এনজিও) টিএমএসএসসহ জেলায় কর্মরত প্রতিষ্ঠান গুলোর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ঋণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।


সূত্রমতে, সরকারের নির্দেশে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এনজিও ঋণ শ্রেণিকরণ কার্যকর হবে না বলে নির্দেশনা জারি করে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)। একই সঙ্গে নির্ধারিত সময় শেষে কোন প্রকার জরিমানা ছাড়াই বকেয়া কিস্তি গ্রহণ করা হবে।

কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ে অধিকাংশ নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত এনজিওগুলো এ নির্দেশনা না মেনে কর্মকর্তা, মাঠকর্মীদের দিয়ে সরকার থেকে লকডাউন উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং সরকার কিস্তি আদায়ের অনুমতি দিয়েছে বলে প্রচার করে
বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জোরপূর্বক কিস্তির টাকা আদায় করছে।


এ নিয়ে দিনমজুর খেটে খাওয়া পরিবার ও সচেতন নাগরিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নারগুন কহরপাড়া মন্দীর বস্তিপাড়া গ্রামের নবদ্বীপ চক্রবর্তী বলেন এখনও কাজে যোগদান করতে না পারায় ঋণ গ্রহীতা দিনমজুর পরিবারের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। এই অবস্থায় টিএমএসএস এর দুই কর্মকর্তা এসে জোরপূর্বক কিস্তি আদায় করছে।


মিনু রাণী বলেন আমি ১’শ টাকা কম দেয়ায় আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক আমানতের টাকা থেকে সমন্বয় করে নেয়।

রচনা রাণী বলেন লগডাউনের কারনে কাজ করতে পারি নাই। মানুষের কাছে কর্জ ও সুদের উপর টাকা নিয়ে খেয়েছি। সেই টাকাই এখনও দিতে পারি নাই। সবে মাত্র কাজে যোগ দিয়া শুরু করেছি। পরিবার পরিজন নিয়ে
চলতেই পারি না আবার মরার উপর খাড়ার ঘা। একই অভিযোগ করেন মেনকা, গীতা রাণীসহ অনেকে।

সালন্দর মাদ্রাসা পাড়া মহল্লার মুন্না বলেন আমার বাড়িতে এসে জোরপূর্বক কিস্তি আদায় করে টিএমএসএসের কর্মী। কিছু টাকা কম দেয়ায় আমাদের আমানতে টাকা থেকে কেটে নেয়।

শহরের শান্তিনগর মহল্লার সুধীর রায় বলেন শুধু টিএমএসএস নয় জেলার প্রতিটি উপজেলা ও পৌরশহর এলাকায় কিস্তির টাকা আদায়ের জন্য মাঠে নেমেছে ঋণদানকারী সংস্থা গুলো। তিনি আরও জানান লকডাউন চলাকালীন সময়ে গুটি কয়েক এনজিও’র পক্ষ থেকে ঋণ গ্রহীতাদের মাঝে লোক দেখানো যৎসামান্য ত্রাণ বিতরণ করা হলেও অধিকাংশ এনজিওই কোন ধরনের সহযোগিতার খবর পাওয়া যায়নি।

শহরের শান্তিনগর মহলার ঋণ গ্রহিতা আফরোজা বেগম অভিযোগ করে বলেন, করোনা থেকে বাঁচতে চরম আতঙ্কের মধ্যে একদিকে আমরা যেমন কর্মহীন হয়ে পড়েছি, তেমনি করোনা থেকে নিজেদের বাঁচাতে সরকারের নির্দেশে ঘরে থেকে মানবেতর জীবন যাপন করছি। এরইমধ্যে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এনজিও’র মাঠকর্মীরা কিস্তির টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছে।

শহরের মুসলিমনগর মহল্লার ঋণগ্রহীতা রিকশা চালক হিয়ালু ও হেলাল বলেন করোনার ঝুঁকির মধ্যেও প্রতিদিন পরিবারের সদস্যদের আহারের জন্য বের হয়ে আগের মতো আয় রোজগার হচ্ছে না। বর্তমানে তেমন কোন লোক রাস্তায় বের হচ্ছেন না। তারা আরও বলেন, আগে রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচশ’ টাকা আয় হলেও এখন
সারাদিনে একশ’ টাকা আয় হচ্ছে না। এ অবস্থায় এনজিও’র মাঠকর্মীরা কিস্তি’র টাকার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। চলমান পরিস্থিতিতে আমাদের আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। তাই কিস্তির টাকা এখন কিভাবে দিবো বিষয়টি মাঠকর্মীদের বার বার বলা সত্তে¡ও তারা তা মানছেন না।

পৌর শহরের বাসিন্দা আহম্মেদ রাজু বলেন মে মাসে কিস্তি আদায়ের অভিযোগে প্রশাসন মোবাইল কোর্ট বসিসিয়ে টিএমএসএস জরিমানা করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সাংবাদিক কিস্তি আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে টিএমএসএসের এরিয়া ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম ও ব্যাঞ্চ ম্যানেজার রবিউল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।

টিএমএসএসের এরিয়া ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম বলেন সরকার আমাদের অনুমোতি দিয়েছে। সে মোতাবেক আমারা কিস্তি আদায় করছি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. কে.এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এনজিওগুলো কিস্তির টাকা আদায় করবে না বলে এমআরএ থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছিলো। নির্ধারিত তারিখের আগেই মাঠপর্যায়ে কোন ঋণদানকারী সংস্থা কিস্তি আদায় কিংবা চাপ প্রয়োগ করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণকে জানাতে হবে। ওনারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

আপনার মুল্যবান মতামত দিন......

comments

প্রধান কার্যালয়: শিমুল লজ, ১২/চ/এ/২/৪ (২য় তলা), রোড নং ৪, শেরেবাংলা নগর,শ্যামলী,ঢাকা‌.
বার্তা বিভাগ-01763234375 অথবা 01673974507, ইমেইল- sangbadgallery7@gmail.com

আঞ্চলিক কার্যালয়: বঙ্গবন্ধু সড়ক, আধুনিক সদর হাসপাতাল সংলগ্ন, বাসস্ট্যান্ড, ঠাকুরগাঁও-৫১০০

2012-2016 কপি রাইট আইন অনুযায়ী সংবাদ-গ্যালারি.কম এর কোন সংবাদ ছবি ভিডিও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথায় প্রকাশ করা আইনত অপরাধ

Development by: webnewsdesign.com