ঠাকুরগাঁওয়ের

বালিয়াডাঙ্গীতে শিক্ষার্থীদের পোষাকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ…

মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই ২০২২ | ১০:২২ অপরাহ্ণ |

বালিয়াডাঙ্গীতে শিক্ষার্থীদের পোষাকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ…
প্রতিনিধির পাঠানো তথ্য ও ছবিতে ডেক্স রিপোর্ট

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ১০৬ নং শালডাঙ্গা রোমালয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০২০-২১ অর্থ বছরের ক্ষুদ্র মেরামতের ও স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্লান্ট (স্লিপ) ফান্ড ও ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা এবং পোষাক দেওয়ার নামে শিক্ষাথীদের নিকট হতে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান সহকারী শিক্ষক তসলিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক জানান, তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান সহকারী শিক্ষক তসলিম উদ্দীন বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতের ২ লাখ টাকার কাজ না করেই টাকা উত্তোলন করেন।


অপরদিকে স্লিপ এর ৫০ হাজার টাকা দিয়ে শিক্ষা সামগ্রী ক্রয় করার কথা থাকলেও তা না করে নিজেই সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করে।

এদিকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পোষাক দেওয়ার নামে শিক্ষাথীদের নিকট হতে মাথাপিছু এক হাজার টাকা করে উত্তোলন করে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।


ওই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীতে অধ্যায়নরত ছাত্র জানান, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ও ম্যানেজিং কমিটির মতামত ছাড়াই সহকারী শিক্ষক তসলিম উদ্দীন শিক্ষার্থীদের মাঝে পোষাক দেওয়ার নামে প্রত্যেককে বাধ্য করে একহাজার টাকা হারে আদায় করে। এতে তিনি ১ টি নিম্নমানের স্কুল ব্যাগ, শাট ও টাই দেয়। সেই সাথে জুতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকলেও তা এযাবৎ না দেওয়ায় হতাশায় রয়েছি। যে পোষাকের সেট তিনি দিয়েছেন তার সর্বোচ্চ পাঁচশত টাকা দাম হতে পারে। বাকী টাকাটা ওই স্যারের পকেটে রেয়েছে। আমার বাবা একজন ক্ষুদ্র কৃষক হওয়ায় তার পক্ষে এক হাজার টাকা জোগাড় করে দিতে ভীষণ কষ্টের ব্যাপার হয়েছে।

অপরদিকে, চতুর্থ শ্রেণীতে অধ্যায়নরত শিক্ষাথী জানান, তার বাবা একজন গরীব ব্যাক্তি তার পক্ষে বিদ্যালয়ের পোষাকের জন্য তসলিম উদ্দীন স্যারকে এক হাজার টাকা দেওয়া অনেক কষ্টের ব্যাপার হলেও তবুও স্যারের কথায় বাধ্য হয়ে দিয়েছেন।


এদিকে পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত শিক্ষাথী জানান, আমার বাবা একজন ক্ষুদ্র কৃষক তার পক্ষে বিদ্যালয়ের পোষাকের জন্য তসলিম উদ্দীন স্যারকে এক হাজার টাকা দেওয়া অসাধ্য কষ্টের ব্যাপার হলেও তবুও স্যারের কথা রক্ষা করতে বাধ্য হয়ে আমার বাবা অন্যের কাছে টাকা হাওলাত নিয়ে সেই টাকা জোগাড় করে দিয়েছেন। কিন্তু স্যারের কথা অনুযায়ী পোষাকের সকল সামগ্রী এযাবৎ পাইনি।

ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত শিক্ষাথীর বাবা আহসান আলী জানান, আমি একজন সাধারণ ক্ষুদ্র কৃষক, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তসলিম উদ্দীন আমার মেয়ের পোষাক সেট দেওয়ার নামে আমার নিকট হতে এক হাজার টাকা নেয়। কিন্তু তার কথা মতো টাকা দেওয়া হলেও তিনি দ্বায়সারা পোষাক দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছে।

এসব টাকা বরাদ্দ প্রাপ্তি এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সংশ্লিষ্টতার বিধান থাকলেও তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান সহকারী শিক্ষক তসলিম উদ্দীন সেই সময় গোপনে উপজেলা প্রকৌশলী মইনুল ইসলামের সহযোগীতায় কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে শিক্ষা অফিসে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রধান শিক্ষক করোনা ভাইরাসের কারনে দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোন কাজ না করে শিক্ষা অফিসে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য প্রাপ্ত ২ লক্ষ টাকা এবং স্লিপের জন্য ৫০ হাজার টাকা নিজের পকেটে ভরেন।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের কাজ শেষ হওয়ার পর সরেজমিনে কাজ পরিদর্শন করে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। তারপর সংশ্লিষ্ট কাজের বিল উত্তোলন করতে পারবে। কিন্তু কাজ শেষ না হলেও উপজেলা প্রকৌশলী মইনুল ইসলাম উপজেলা শিক্ষা অফিসে কাজ শেষ হয়েছে এমন প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে প্রতিবেদকের কাছে এ বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

এ বিষয়ে স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) জহুরা বেগম বলেন, গত ২০শে জানুয়ারী যোগদান করা হলে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

এবিষয়ে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান সহকারী শিক্ষক তসলিম উদ্দীন বলেন, আমি বিদ্যালয়ে সরকারি বরাদ্দের ক্ষুদ্র মেরামতের ২ লাখ এবং স্লিপ ফান্ডের ৫০ হাজার টাকার সম্পূর্ণ কাজ ও কেনাকাটা করেছি। কে বা কারা আমার পিছনে লেগে আপনাদের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয় আমি কিছু বুঝতে পারি না।

তৎকালীন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জাহের আলী বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাকে চেকে স্বাক্ষর করতে বললে, আমি তাকে বলেছি কি কি কাজ করেছেন? আমাকে চার্ট দেখান তারপর আমি স্বাক্ষর করার কথা বললে তিনি সেটা না করে কৌশলে আমার নিকট স্বাক্ষর নেন।

এব্যাপারে শালডাঙ্গা রোমালয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও লোহাগাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তসলিম উদ্দীন ম্যানেজিং কমিটি ও চলতি দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার মতামত ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পোষাক দেওয়ার নামে তাদের নিকট হতে মাথাপিছু এক হাজার টাকা হারে আদায় করার অভিযোগ পাওয়া যায়। যাহা তিনি নিয়ম বহির্ভূত কাজ করেছেন।

এব্যাপারে বানাগাঁও ক্লাষ্টারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার আনিসুর রহমান বলেন, তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের কাজ করে টাকা উত্তোলন করেছেন। তবে স্লিপ ফান্ডের টাকা দিয়ে স্কুলের জিনিষপত্র কিনে রেখে দিয়েছে।

এবিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শিক্ষা অফিসার অতুল চন্দ্র রায় বলেন, এধরনের কাজের অনিয়ম পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মুল্যবান মতামত দিন......

comments

প্রধান কার্যালয়: শিমুল লজ, ১২/চ/এ/২/৪ (২য় তলা), রোড নং ৪, শেরেবাংলা নগর,শ্যামলী,ঢাকা‌.
বার্তা বিভাগ-01763234375 অথবা 01673974507, ইমেইল- sangbadgallery7@gmail.com

আঞ্চলিক কার্যালয়: বঙ্গবন্ধু সড়ক, আধুনিক সদর হাসপাতাল সংলগ্ন, বাসস্ট্যান্ড, ঠাকুরগাঁও-৫১০০

2012-2016 কপি রাইট আইন অনুযায়ী সংবাদ-গ্যালারি.কম এর কোন সংবাদ ছবি ভিডিও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথায় প্রকাশ করা আইনত অপরাধ

Development by: webnewsdesign.com