নাজমুল হক নাহিদ, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
অবশেষে মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা পেলেন নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের আতাইকুলা পালপাড়া গ্রামের ১০ বীরাঙ্গনা।
মুক্তিযোদ্ধাদের সমান সুযোগ-সুবিধাসহ মর্যাদা পেতে যাচ্ছেন স্বাধীনতার সময় স্বামী, সন্তানসহ সব হারানো এই নারীরা। তবে ১০ জনের মধ্যে এরইমধ্যে ৪ জন পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। স¤প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি গেজেটের মাধ্যমে তাদের নাম প্রকাশ করেছে। দীর্ঘ ৪৭ বছরের লালন করা স্বপ্নটি বাস্তবায়িত হওয়ায় তারা খুব আনন্দিত।
১০ বীরাঙ্গনার মধ্যে বানী রানী পাল, ক্ষান্ত রানী পাল, রেণু বালা ও সুষমা সূত্রধর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কোনোমতে বেঁচে আছেন মায়া রানী সূত্রধর, রাশমণি সূত্রধর, সন্ধ্যা রানী পাল, কালীদাসী পাল, সন্ধ্যা রানী ও গীতা রানী পাল।
একাত্তরের সেই দুর্বিষহ যন্ত্রণা আর সামাজিক বঞ্চনার পাশাপাশি অভাব-অনটন ও শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেই চলছে তাদের জীবন।
রাণীনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর তীরে ছায়াঘেরা শান্ত আতাইকুলা পালপাড়া গ্রাম। ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী স্থানীয় রাজাকার ও আলবদরদের সহযোগিতায় সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের ওপর নির্যাতন চালায়। তখন পাকবাহিনী গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ওই দিন গোবিন্দ চরণ পাল, সুরেশ্বর পাল, বিক্ষয় সূত্রধর, নিবারণ পালসহ ৫২ জন মুক্তিকামী জনতাকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। এ সময় নারীরা স্বামী সন্তানকে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানিয়েও পাকিস্তানি বাহিনীর মন গলাতে পারেননি। উল্টো পাক-জান্তরা নারীদের ওপর চালায় পাশবিক নির্যাতন।
বীরাঙ্গনা কালী দাসী পাল (৭৫) বলেন, ‘ওই দিন পাকিস্তানি আর্মিরা আমার স্বামীকে ঘরের দরজা ভেঙে ধরে নিয়ে যায়। স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে আমিও সেখানে গিয়ে তার প্রাণ ভিক্ষা চাই। কিন্তু তারা কোনও কথা না শুনে আমার চোখের সামনে স্বামীসহ ৫২ জনকে হত্যা করে। পরে আমার ওপরও চালায় নানা ধরনের নির্যাতন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার এক ছেলে আছে। সে দিনমজুরের কাজ করে। আমিও পেটের তাগিদে কখনও ধান কুড়িয়ে, কখনও চাতালে বা অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে কোনোরকমে বেঁচে আছি। ভেবেছিলাম বেঁচে থাকতে মনে হয় স্বীকৃতি পাবো না। অবশেষে স্বীকৃতি পেয়েছি। আমি অনেক খুশি। সরকারকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।’
বীরাঙ্গনা সন্ধ্যা রানী পাল (৭০) বলেন, ‘ পাকিস্তানি আর্মিরা অন্যদের সঙ্গে আমার স্বামীকেও ধরে নিয়ে যায়। আমি শিশু সন্তানকে নিয়ে পাশের বাড়ির বড় মাটির ডাবরের ভেতর লুকিয়ে ছিলাম। কিন্তু ছেলের কান্না শুনে পাকিস্তানি আর্মিরা আমাকে সেখান থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরে এই গ্রামের অন্য মেয়েদের মতো আমার ওপরও চালায় পাশবিক নির্যাতন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের স্বীকৃতির পাশাপাশি
সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য। সুযোগ-সুবিধাগুলো দ্রæত কার্যকর হলে যে কয়দিন বেঁচে আছি, সে কয়দিন ভোগ করে যেতে পারতাম।’
রাণীনগর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অ্যাডভোকেট ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘অনেক চেষ্টার পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার অবশেষে আতাইকুলা গ্রামের ১০ বীরাঙ্গনাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য নাম গেজেটভুক্ত করেছে। স্বীকৃতিপ্রাপ্তির সব প্রক্রিয়া এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বরাদ্দ এলেই আগামী বিজয় দিবসে অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হবে বলে আশা করছি।’
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইসরাফিল আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার ও বীরাঙ্গনাদের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক। অবশেষে আমাদের সবার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আতাইকুলা পালপাড়া গ্রামের এই নারীরা মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা পেয়েছে। এটি আমাদের অনেক বড় একটি সফলতা। আমার খুব ভালো লাগছে। যে কয়জন এখনও বেঁচে আছেন, তারা অন্তত তাদের ন্যায্য প্রাপ্যটুকু একটু হলেও ভোগ করতে পারবেন। আর
স্বীকৃতি নিয়ে সমাজে বেঁচে থাকতে পারবেন।’
প্রধান কার্যালয়: শিমুল লজ, ১২/চ/এ/২/৪ (২য় তলা), রোড নং ৪, শেরেবাংলা নগর,শ্যামলী,ঢাকা.
বার্তা বিভাগ-01763234375 অথবা 01673974507, ইমেইল- sangbadgallery7@gmail.com
আঞ্চলিক কার্যালয়: বঙ্গবন্ধু সড়ক, আধুনিক সদর হাসপাতাল সংলগ্ন, বাসস্ট্যান্ড, ঠাকুরগাঁও-৫১০০
2012-2016 কপি রাইট আইন অনুযায়ী সংবাদ-গ্যালারি.কম এর কোন সংবাদ ছবি ভিডিও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথায় প্রকাশ করা আইনত অপরাধ
Development by: webnewsdesign.com